Monday, October 6, 2025

গাঁজা ধ্বংসলীলা

Page 1 / 10 ১৯ বছর বয়সী রাওয়ানের টেবিলের ওপর খোলা ‘সভ্যতার স্থাপত্য’ বইটি পড়ে আছে। কিন্তু তার মনোযোগ বইয়ে নেই; তা আটকে আছে দূর দিগন্ত থেকে ভেসে আসা চাপা, অভ্যস্ত গুঞ্জন আর থেমে থেমে আসা ধাতব শব্দে। ঘরের কোণটা তার জন্য এক মুহূর্তের আশ্রয়, যেখানে সে বাইরের দেয়ালগুলো থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে।
Page 2 / 10 হঠাৎ গুঞ্জন থামল। একটি তীব্র বিস্ফোরণের পর যে ভয়াবহ নীরবতা নেমে আসে, এটি ছিল তেমনই অস্বস্তিকর। রাওয়ান জানে, এই নীরবতা এক ধরণের ফাঁদ; এটি তার হৃদয়ের শব্দ এবং ধীর লয়ে আসা বাতাসের ফিসফিসানিকে আরও জোরে মনে করিয়ে দেয়। সে ধীরে ধীরে বইটি বন্ধ করে দম আটকে অপেক্ষা করে।
Page 3 / 10 বিকেলে রাওয়ান তার দাদা খালিলের কাছে গেল। বয়সে ভারাক্রান্ত খালিল তার ছোট্ট বারান্দায়, ফাটল ধরা একটি টবে সযত্নে জল দিচ্ছিলেন একটি জলপাই চারাগাছে। পটভূমির ধ্বংসলীলা থেকে এই গাছটি যেন ভিন্ন জগতের। খালিল যেন নিজেই সেই চারাগাছের মতো—ধৈর্যশীল, শিকড়ে বাঁধা।
Page 4 / 10 খালিল জলপাই চারাটির পাতা স্পর্শ করলেন। ফিসফিস করে তিনি বললেন, "হাওয়া যখন উত্তাল হয়, তখন এই উপরের ডালগুলো ভাঙে, রাওয়ান। কিন্তু শিকড়েরা পাথরের গভীরে চলে যায়। মাটি এদের ইতিহাস মনে রাখে। আর এই ইতিহাস ভুলে যাওয়া অসম্ভব।"
Page 5 / 10 পরদিন, রাওয়ান শহরের মাঝের বাজারের দিকে গেল। পথটি ভাঙা কংক্রিট, ধুলো আর পরিচিত জিনিসের টুকরোয় ভরা। সে একটি জলের ক্যানিস্টার ও কয়েকটি প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যাচ্ছিল। চারপাশে মানুষজন, সবাই এক স্বাভাবিক জীবনের ছদ্মবেশ তৈরি করতে ব্যস্ত।
Page 6 / 10 একটি দেয়ালের স্তূপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়, রাওয়ান একটি মরচে ধরা ধাতব বস্তুর ঝলক দেখতে পেল। সে থেমে গিয়ে বস্তুটি বের করল—এটি ছিল একটি ছোট, নকশাকাটা চাবি। কোনো এক সময়ের কোনো এক ঘরের তালা খোলার স্মৃতি বহন করছিল এই চাবিটি।
IXhX4o2g3SM06bRXywp1CjpbH8C0CxHbuxman989gVh1oTDa1XdIdvAul7VH3VgGp-QfISt4iE1jnkEi5OSdSPRKWCY5LbY4fnCPuzm-3rtLH8EhuZGFHAio0z_AlNi6g6hsXtxCPwXySNSyMxPQE7S9xPhk5kYKhCpPQm1qPIUjjzEy2M_-plHuQ/s320/unnamed%20-%202025-10-06T042855.244.png"/>
Page 7 / 10 রাওয়ান চাবিটি খালিলকে দেখাল। চাবিটি হাতে নিয়ে তার চোখ বড় হলো—তিনি এটি চিনতে পারলেন। "আহা, এটি আমাদের পুরানো কফি হাউসের পেছনের দরজার চাবি ছিল," খালিল দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। "সেখানে আমরা কত কবিতা পড়তাম, স্বপ্ন দেখতাম।"
Page 8 / 10 খালিল তাকে তাদের পুরনো সুন্দর শহরটির গল্প বললেন, যেখানে কফি হাউস ছিল হাসি আর তর্কে মুখরিত। তারা দুজনে একটি ঝাপসা হয়ে আসা সাদা-কালো ছবি দেখল, যা খালিল লুকিয়ে রেখেছিলেন—তাতে এক ঝলমলে, অচেনা শহরের ছবি। রাওয়ান বুঝতে পারল—ধ্বংসের নিচে শুধু ইমারত নয়, একটি গোটা জীবনও চাপা পড়ে আছে।
Page 9 / 10 রাতে রাওয়ান তার ল্যাপটপে বসল, তার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনপত্রের জন্য একটি প্রবন্ধ লিখতে হবে। ইন্টারনেটের সংযোগ অস্থির, মাঝে মাঝেই তার বন্ধুদের মুখ ঝাপসা হয়ে আসে। তার নিজের পরিস্থিতি বাইরের জগতের কাছে বোঝানো কঠিন। সে প্রবন্ধের বিষয়বস্তু নিয়ে সংগ্রাম করে: "ভবিষ্যতের ভিত্তি নির্মাণ।"
Page 10 / 10 রাওয়ান শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিল। সে চাবিটি এবং খালিলের চারাগাছ থেকে সাবধানে ছেঁড়া একটি তাজা জলপাই পাতা তার নোটবুকে রাখল। তার প্রবন্ধের শিরোনাম সে লিখল: "শিকড়ের স্থাপত্য"। জানালা দিয়ে পশ্চিমের লাল আকাশ দেখা যায়। সে জানে, সে কেবলই বেঁচে থাকার নয়, বরং নতুন করে শুরু করার গল্প লিখছে। Start over

No comments:

Post a Comment

গাঁজা ধ্বংসলীলা

Page 1 / 10 ১৯ বছর বয়সী রাওয়ানের টেবিলের ওপর খোলা ‘সভ্যতার স্থাপত্য’ বইটি পড়ে আছে। কিন্তু তার মনোযোগ বইয়ে নেই; তা আটকে আছে দূর দিগন্ত...