Friday, October 3, 2025

সিনবাদ এবং মায়ার গুহা (Sinbad and Maya’s Cavern)

সিনবাদ এবং মায়ার গুহা (Sinbad and Maya’s Cavern) By bahadur
Page 1 / 10 সূর্য ছিল আকাশের মাঝখানে, কিন্তু সিনবাদের জাহাজ ‘সমুদ্র-সর্প’ গতিহীন। কোনো বাতাস নেই, শুধু গাঢ় নীলের উপর এক রহস্যময় স্থিরতা। দিগন্তে একটি দ্বীপ ভেসে উঠল, যা দেখতে একটি বিশাল, ঘুমন্ত পাথরের মতো। সিনবাদ ডেকে বলল, “ফরিদ, নৌকো নামাও। এই দ্বীপটির নাম মানচিত্রে নেই, একে আমি 'কম্পমান পাথরের দ্বীপ' বলে ডাকি। এর নীরবতা ভালো লাগছে না।”
Page 2 / 10 তারা দুজন তীরের কাছে পৌঁছাল। বালুকাবেলায় তাদের নিজেদের নতুন পদচিহ্ন পড়ল। কিন্তু তার পাশে ছিল আরও কিছু ছাপ—পুরোনো, গভীর খাদ, যেন কোনো বিশাল নখর দিয়ে বালু চিরে দেওয়া হয়েছে। মাঝে মাঝে চিকচিক করছে অদ্ভুত, সূক্ষ্ম, রেশম-সদৃশ তন্তু। ফরিদ ফিসফিস করে বলল, “এগুলো মানুষের কাজ নয়, সিনবাদ। কোনো শিকারী এর আগে এখানে এসেছে।”
Page 3 / 10 নখরের দাগ অনুসরণ করে তারা ঘন জঙ্গলে প্রবেশ করল। সবুজ পাতার আড়ালে তারা খুঁজে পেল একটি অস্বাভাবিক পাথর-ঢাকা খাদ, অনেকটা একটি প্রাচীন কুয়োর মুখের মতো। খাদটি থেকে ভ্যাপসা গরম আর নোনা জলের গন্ধ ভেসে আসছে। হঠাৎ, নিচ থেকে ভেসে এল ক্ষীণ, কিন্তু সুনির্দিষ্ট এক সুর—একটি বিষণ্ণ, দ্রুতলয়ের গুনগুন শব্দ।
Page 4 / 10 সিনবাদের অভিজ্ঞ চোখ সতর্ক হলো। তিনি গুনগুন শব্দটি চিনতে পারলেন। “এটা ‘সাগরের সতর্কতা’, ফরিদ,” সিনবাদ গম্ভীরভাবে বললেন। “ঐ সুর শুধু সেই ডুবুরিরাই গায় যারা গভীর অন্ধকারে মোতির সন্ধান করে। কেউ বিপদ সঙ্কেত দিচ্ছে।” মানচিত্রের প্রয়োজন নেই, এখন তাদের গাইড হলো একটি কণ্ঠস্বর। তারা দড়ি বেঁধে নিচে নামার সিদ্ধান্ত নিল।
Page 5 / 10 তারা প্রবেশ করল এক বিশাল ভূগর্ভস্থ গুহায়। দেওয়াল জুড়ে সেই অদ্ভুত রেশম-সদৃশ তন্তু, এখন যা মৃদু নীল আলোয় ঝলমল করছে। গুহার এক কোণে সিনবাদ খুঁজে পেল একটি ছোট, হাতে খোদাই করা কাঠের টুকরো—একটি নারী-মুখ। “মায়া,” সিনবাদ ফিসফিস করে বলল। সে তার কথা বলার আগেই গুহাটি এক গভীর কম্পনে কেঁপে উঠল, এবং নোনা জলের শব্দে ভরে গেল।
Page 6 / 10 কম্পন থেমে গেল, কিন্তু তার বদলে এল জলের মধ্য থেকে আসা এক ভয়ংকর হিসহিস শব্দ। গুহার কেন্দ্রের গভীর জল থেকে উঠে এল এক বিশাল, বহুদন্তযুক্ত দানব—'গভীরতার গ্রাস'। এর শরীরের অংশগুলো কদাকার, লম্বা, শক্ত শুঁড়ের মতো। দানবটি তাদের একমাত্র পথ আটকে দাঁড়াল। ভয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া ফরিদ একটি পাথরের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে নিল।
Page 7 / 10 সিনবাদ দানবটির মুখোমুখি হলেন। “তুমি শুধু একটি পাহারাদার, একটি ফাঁদ!” তিনি চেঁচিয়ে বললেন। দানবটি ধীরে ধীরে তার বিশালাকার শরীর নিয়ে এগিয়ে আসতে শুরু করল। সিনবাদ দ্রুত তার কোমরের থলে থেকে একটি তেল-মশাল বের করে সেটির শিখা দানবটির একমাত্র চোখের দিকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারলেন। মশালটি দানবের শরীরে লাগতেই সেটি যন্ত্রণায় চিৎকার করে পিছিয়ে গেল।
Page 8 / 10 সুযোগ বুঝে সিনবাদ গুহার অন্য প্রান্তে ছুটলেন। সেখানে একটি ভেজা, শক্ত রেশমের জালে বাঁধা অবস্থায় খুঁজে পেলেন মায়াকে। মেয়েটি চোখ তুলে তাকাল—অত্যন্ত শান্ত, কিন্তু তার দৃষ্টিতে ছিল গভীর প্রত্যয়। “আমি জানতাম তুমি আসবে,” মায়া ফিসফিস করে বলল। “দানবটির দুর্বলতা এই দ্বীপের ভেতরের স্ফটিক—কম্পমান পাথর। এটি ওর শরীরের প্রতিটি স্পন্দনকে থামিয়ে দেয়।”
Page 9 / 10 মায়া যখন মুক্তি পেল, তখন দানবটি তার চোখ সুস্থ করে ফিরে এল। সিনবাদ মায়াকে বললেন, “ফরিদকে খুঁজে বের করো।” মায়া হাত ধরে সিনবাদকে গুহার একেবারে পেছনের দিকে নিয়ে গেল, যেখানে একটি সরু ফাটল দেখা যাচ্ছিল। “এই পথ, সিনবাদ! এর মধ্য দিয়ে আমরা বেরোতে পারব। কিন্তু তাড়াতাড়ি!” পুরো গুহাটি তখন পাথরের বৃষ্টিতে কেঁপে উঠছে। Pag
e 10 / 10 তারা তিনজন, ফরিদকে সঙ্গে নিয়ে, কোনোমতে ফাটল থেকে বেরিয়ে সমুদ্রের তীরে পৌঁছাল। তারা যখন নৌকোয় উঠে দূরে সরে যাচ্ছিল, তখন কম্পমান পাথরের দ্বীপটি এক ভয়ংকর গর্জনে ভেঙে পড়তে শুরু করল। মায়া সিনবাদের দিকে তাকাল। “দানবটি তার ডিম রক্ষা করছিল, আর কম্পমান পাথরই তাকে দুর্বল করার একমাত্র উপায়। এখন সেটি সমুদ্রের অতলে ডুবে যাবে।” সিনবাদ নোঙর তুলে যাত্রা শুরু করলেন—তাঁর নতুন সঙ্গী এবং একটি নতুন, ভয়ংকর রহস্যকে সঙ্গে নিয়ে।
Start over

No comments:

Post a Comment

রাজ মহল

রাজ মহল By md BABUHOSSAN bahadur Page 1 / 10 বহু প্রাচীন কালে, এক সুদূর রাজ্যে ছিল এক জাঁকজমকপূর্ণ রাজ মহল। সে মহলের রাজা অর্কজ্য...